দ্রুত মানসিক চাপ কমানোর কার্যকরী উপায়

আপনি হয়তো এখন মানসিক টেনশনে ভুগছেন তাই মানসিক চাপ কমানোর কার্যকরী উপায় সম্পর্কে জানতে আপনি এই লেখাটি পড়তে এসেছেন। তবে চিন্তার কিছু নেই।শুধু আপনি একা নন, আমরা সবাই আমাদের এই ব্যস্ত জীবনে কোন না কোন ভাবে মানসিক চাপ অনুভব করে থাকি। তাই আজকে আমি আপনাদের আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে জানাবো কিভাবে দ্রুত মানসিক চাপ কমানো যায়।


দ্রুত মানসিক চাপ কমানোর জন্য কিছু কৌশল রয়েছে যা অনুসরণ করা যেতে পারে। নিচে মানসিক চাপ কমানোর কিছু কার্যকরী উপায় তুলে ধরা হলো যাতে আপনি আপনার বাস্তব জীবনে সহজেই কাজে লাগাতে পারেন।

পেজ সূচিপত্রঃ

মানসিক চাপ কি

মানসিক চাপ আমাদের জীবনে যেন এক অভিশাপ। মানসিক চাপ সবচেয়ে ভয়ংকর রোগ গুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু আমরা এটাকে তেমন গুরুত্ব দেই না। মানসিক চাপ হল শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, যা আমাদের শরীর ও মনের ওপর প্রভাব ফেলে যখন আমরা কোনরকম চাপ, পরিস্থিতি বা হুমকির মুখে পড়ে থাকি। সহজ ভাষায় বলা যায় যখন আমরা কোন কাজ শুরু করতে যাই, তখন শুধু আমাদের ইচ্ছা থাকলেই হবে না বরং পরিবেশ,পরিস্থিতি,সময় ও মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে। আর যখন এই উপাদানগুলো বাধাগ্রস্ত হয় কিংবা আমরা কাজে লাগাতে না পারি তখন আমাদের ভেতরে ব্যর্থতার অনুভূতি জন্ম নেয়। আর তখন থেকেই শুরু হয় হতাশা,রাগ,দুশ্চিন্তা ইত্যাদি। আর এর ফলে শরীর ও মনে এক ধরনের পরিবর্তন আসে সেটাই হল মানসিক চাপ।

মানসিক চাপের কারণ

মানসিক চাপ বিভিন্ন কারণে সৃষ্টি হতে পারে। ব্যক্তিভেদে এটা ভিন্ন হয়ে থাকে। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকি আর এর ফলে আমরা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হয়ে থাকি। যার ফলে আমরা সহজে মেনে নিতে পারি না। আরে মেনে নিতে না পারার কারণেই আমরা হতাশায় চলে যায়। প্রধান কারণ গুলোর মধ্যে হল কাজ বা পড়াশোনা সংক্রান্ত চাপ, সম্পর্কের সমস্যা, আর্থিক সমস্যা, অপব্যবহার ইত্যাদি জীবনের বড় কোনো পরিবর্তন। নিচে মানসিক চাপের কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হলোঃ

  • পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণঃ মানসিক চাপের কারণগুলোর মধ্যে এটি একটি বড় কারণ। পরিবারের মধ্যে ঝগড়া, ভুল বোঝাবুঝি,কারো মৃত্যু, কারো অসুস্থতা এবং অতিরিক্ত দায়িত্ব একজন মানুষকে মানসিক চাপে ফেলতে পারে। আবার অনেক সময় একাকীত্ব বা আর্থিক সমস্যার কারণেও মানসিক ভাবে হতাশগ্রস্ত হয়ে থাকে মানুষ।
  • শারীরিক কারণঃ একজন মানুষ যদি অনেকদিন ধরে অসুস্থ হয়ে থাকে কিংবা শারীরিক অস্বস্তি বা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার ফলে তার মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে। আর এর ফলে দুশ্চিন্তা করতে করতে সে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
  • কাজ সংক্রান্ত চাপঃ দৈনন্দিন জীবনে মানুষ বিভিন্ন ধরনের কাজ করে এর মাঝে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়ে থাকে যেমনঃ অফিসে সহকর্মীদের সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি, সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারা, অফিসের অতিরিক্ত কাজের প্রেসার ইত্যাদি। এই চাপগুলো অনেকেই নিতে পারেনা যার ফলে সে হতাশায় ভোগে।
  • অর্থনৈতিক সমস্যাঃ হতাশার সবথেকে বড় সমস্যাগুলোর মধ্যে সবথেকে বড় সমস্যা হচ্ছে অর্থনৈতিক সমস্যা। একজন ব্যক্তি চাকরি চলে যাওয়া, আয় কমে যাওয়া, ঋণ করার পর সেটা পরিশোধ করতে না পারা বা প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে অক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়গুলো মানসিক চাপের কারণ।
  • সম্পর্কের সমস্যাঃ প্রিয় মানুষের সাথে সম্পর্কের ভাঙ্গন,বা বন্ধুত্বের মধ্যে দূরত্ব একজন মানুষকে একাকিত্বে ভোগাই। আবার কেউ যদি কারোর বিশ্বাস ভেঙে থাকে বা অবহেলা করে তাহলে একজন মানুষ ডিপ্রেসড হয়ে যায়। কেউ কেউ এই চাপ থেকে বেরোতে পারে আবার কেউ পারেনা।
  • পরিবর্তন বা অনিশ্চয়তাঃ হঠাৎ কোনো বড় দুর্ঘটনা হলে একজন মানুষ তা সহজে মেনে নিতে পারে না। আবার এমন অনেক মানুষ আছে যারা ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তা করে এই ধরনের মানুষগুলো সব সময় মানসিকভাবে চাপে থাকে।  

মানসিক চাপের ফলে আমাদের কি কি শারীরিক অসুবিধা হয়

মানসিক চাপের ফলে আমাদের শরীরের অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে। আর এই চাপ যদি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে তাহলে শুধু মন না শরীরের উপরেও গভীরভাবে প্রভাব ফেলে যেমনঃ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি। আমাদের শরীরে যে প্রভাব গুলো পড়ে তা যে মানসিক চাপের কারণে হচ্ছে এটা আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না। মানসিক চাপ মানুষের মৃত্যু ঝুঁকির কারণও হতে পারে। মানসিক চাপে থাকলে আমাদের যে শারীরিক অসুবিধা গুলো হয় তা নিচে তুলে ধরা হলোঃ

  • অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ফলে মাথা ব্যথা করা
  • ঘুমের সমস্যা (ঘুম না হওয়া, অতিরিক্ত ঘুম হওয়া বা দুঃস্বপ্ন দেখা)
  • খাওয়ার সমস্যা (অতিরিক্ত খাওয়া বা কেউ খাওয়ার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলে)
  • হজমের সমস্যা
  • শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়া
  • অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় শ্বাসকষ্ট বা প্যানিক অ্যাটাক অনুভব করা
  • অতিরিক্ত ঘাম হওয়া ইত্যাদি।

মানসিক চাপের ভয়াবহতা কেমন

মানসিক চাপ একটি ভয়ংকর রোগ। অনেকেই ছোট কোন বিষয়েই মানসিকভাবে চাপে পড়ে যায় আবার অনেকের অনেক বড় কোন বিষয়ও তার কাছে কিছু মনে হয় না। ব্যক্তি ভেদে মানসিক চাপ ভিন্ন হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে কেউ যদি মানসিক চাপে থাকে তাহলে এটা শুধু তার শরীর ও মনের ওপর প্রভাব ফেলে না বরং এটা তার জীবন-যাপনকে ধ্বংস করে দিতে পারে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ফলে উচ্চ রক্তচাপ, মাথা ব্যথা করা, ঘুমের সমস্যা, শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি নানা রকমের সমস্যার দেখা দেয়। এই সমস্যা গুলোর ফলে মানুষ সাধারণত কাজে মনোযোগ দিতে পারে না আবার অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, আবার কেউ কেউ একাকিত্বে ভোগে। আর এইসব মানসিক চাপের মাধ্যমে মানুষের মৃত্যু ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

আরো পড়ুনঃমাদকাসক্তির কারণ ও প্রতিকার রচনা

কোন কিছু নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা যাবে না কারণ এই দুশ্চিন্তা থেকেই মানুষ ধীরে ধীরে হতাশায় ভোগে। অনেকেই এই হতাশা নিয়ে বাইরে হাসিমুখে থাকলেও তার ভেতরে যেন শেষ হয়ে যায়। মানসিক চাপ এমন একটা বিষয়, যেটা মানুষকে একবার গ্রাস করলে সেখান থেকে ফিরে আসা মুশকিল হয়ে পড়ে। এর ফলে মানুষের মৃত্যু ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

দ্রুত মানসিক চাপ কমানোর উপায়

দ্রুত মানসিক চাপ কমানোর জন্য বেশ কিছু কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে। আমি কিছু কৌশল নিয়ে আলোচনা করব এবং এই কৌশল গুলো অনুসরণ করলে আশা করছি আপনি খুব দ্রুত মানসিক চাপ কমাতে পারবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক দ্রুত মানুষের চাপ কমানোর কিছু উপায়ঃ

  • মানসিক চাপ কমানোর জন্য দ্রুত কৌশল গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস। যদি আপনি মানসিক চাপ অনুভব করেন তাহলে গভীরভাবে নিঃশ্বাস নিন এবং তা আস্তে আস্তে ছেড়ে দিন। এটা ৩-৫ মিনিট করলে আপনার স্নায়ুতন্ত্র শান্ত হতে শুরু করবে।
  • শারীরিক ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে অনেক সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পর হালকা কিছু ব্যায়াম করুন বা ১০ মিনিট হাটুন এতে করে আপনার শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে।
  • প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অভাবে মন মেজাজ ভালো থাকে না। এর ফলে মানসিক দুশ্চিন্তা বাড়তে পারে। তাই মানসিক চাপ কমানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানোর প্রয়োজন।
  • সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দিতে হবে। কোন সমস্যা গুলোর ফলে মানসিক চাপ হচ্ছে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করে বের করতে হবে এবং তা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো দ্রুত মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। 
  • পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে সমস্যা গুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে। তাদের সহানুভূতি আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।
  • মানসিক চাপ কমানোর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নিজেকে সময় দেওয়া। আপনার পছন্দের গানটি শুনুন, আপনার পছন্দের খাবারটি খান, বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যান। এমন কিছু করুন যা আপনার মন ভালো করবে। যতটা সম্ভব নিজেকে সময় দিন। এতে করে দ্রুত মানসিক চাপ থেকে বের হতে পারবেন। 
  • মানসিক চাপ কমাতে স্বাস্থ্যকর খাবার খান। শাক-সবজি, ফল, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে থাকে।
  • নিজেকে সান্ত্বনা দিন। নিজেকে বলুন আমি ঠিক আছি, আমার কিছু হয়নি। আপনার মস্তিষ্কে ইতিবাচক বার্তা পাঠান। এতে করে আপনি খুব দ্রুত মানসিক চাপ থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন।

মস্তিষ্কের ওপর মানসিক চাপের প্রভাব

মানুষের মস্তিষ্কে মানসিক চাপ কতটা প্রভাব ফেলে তা আমরা অনেকেই জানিনা।  চলুন জেনে নেই মস্তিষ্কের ওপর মানসিক চাপের প্রভাব। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ফলে মানুষের চাপ বাড়ে আর এই দুশ্চিন্তা করার ফলে আস্তে আস্তে আমাদের মস্তিষ্কে থাকা নিউরনগুলো কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এর ফলে স্মৃতিশক্তি কমে যায়। কোন কাজ মনোযোগ দিয়ে করা যায় না। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কমে যায়। মানসিক চাপের ফলে আমাদের মস্তিষ্কের অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে যা সহজে আমরা বুঝতে পারি না।

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করার ফলে মাথা ব্যথা, স্ট্রোক হয়ে থাকে। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ মস্তিষ্কের অনেক ক্ষতি করে এবং মস্তিষ্কের গঠন পরিবর্তন করে। গবেষণায় দেখা গেছে অল্প পরিমাণ মানসিক চাপ তেমন ক্ষতি করে না কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের কয়েকটি উপায়

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং কমানোর মধ্যে পার্থক্য হল কমানো হলো সাময়িকভাবে মুক্তি পাওয়া চাপ থেকে আর নিয়ন্ত্রণ হলো চাপকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা যাতে এটা জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে না পারে।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের কয়েকটি কার্যকরী উপায় হলো পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো, মানসিক চাপের উৎস চিহ্নিত করা এবং তা সমাধান করা, স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন। এছাড়াও চাপ কমানোর জন্য কাউন্সেলিং করা যেতে পারে। আশা করা যায় উপরের এই মানসিক চাপ কমানোর কার্যকরী উপায়গুলো অনুসরণ করলে আপনিও দ্রুত মানসিক চাপ থেকে বের হতে পারবেন।

উপসংহারঃ সব শেষে বলা যায়, মানসিক চাপ আমাদের জীবনের একটি অংশ। এটা আমাদের জীবন থেকে একদম এড়ানো সম্ভব নয় তবে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এটা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমাদের মন ও মস্তিষ্ক দুটোই ভালো থাকবে। তাই আমাদের উচিত নিজেকে সময় দেওয়া এবং নিজের অনুভূতিগুলোকে সম্মান করা। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url